Breaking News
Home / Breaking News / কবি ও কলামিস্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটনের গল্প ” রাতুর অশ্রু “

কবি ও কলামিস্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটনের গল্প ” রাতুর অশ্রু “

গল্প | রাতুর অশ্রু |
– আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন

রাতু খুব বেছে বেছে জিনিস পত্র কিনছে। আর সব ক্ষেত্রেই ত্রয়েরর পছন্দকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আর হয়ত এটাই ভালোবাসা। আগামী পরশু রাতু আর ত্রয়ের পাঁচ বছরের প্রেম সফল হতে যাচ্ছে । রাতুর বড়লোক বাবা শেষ পর্যন্ত এই বিয়েতে রাজি হয়েছে। রাতু তাঁদের একমাত্র সন্তান। প্রচণ্ড প্রাচুর্যের মধ্যে মানুষ হয়েছে রাতু। অভাব বা না শব্দটার সাথে তাঁর বাবা মা কখনোই পরিচয় হতে দেয়নি তাঁকে। যা চেয়েছে রাতু তাঁর বাবা মার কাছে তার সবই পেয়েছে।

“মা এই ঘড়িটা দেখ, এটা পড়লে ত্রয়কে খুব মানাবে”

মা মুচকি হেসে সম্মতি দিলেন- “নিয়ে নাও তাহলে ওর জন্য”

সারাদিনধরে মা মেয়ে প্রচুর বিয়ের বাজার করলো, যার বেশিরভাগই ত্রয় এর জন্য। এখানেও তাঁর মা বুঝে গেছে যে তাঁর মেয়ে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে ত্রয়কে।

রাত এগারোটার দিকে রাতু ত্রয়কে ফোন করলো।
“হ্যালো ত্রয়, তুমি আজ একবারও ফোন দেওনি কেন?”

“এই একদম মিথ্যে বলবে না রাতু, দুপুরে দিয়েছিলাম। তুমিই তো বললে শপিংয়ে আছো। তাই আমি আর ঝামেলা করিনি।”

ত্রয়, রাতে খেয়েছো?

না, রান্না করার সময় পাইনি। তবে এখন তুলে দিয়েছি। ম্যাচ এ আজ বিদ্যুৎ ও নেই।”

“আর একদিন পর থেকে তোমার ম্যাচ এ থাকা খাওয়ার কাহিনি শেষ।”

“কিন্তু রাতু, আমার এখনও খুব একটা মন টানছে না যে শ্বশুর এর. কোম্পানিতে চাকরি এবং তাঁরই মেয়ের সাথে তাঁরই অন্য আরেকটি ফ্লাটে সংসার করতে। কেমন যেন…..”

রাতু এবার ক্ষেপে গেলো। ” দেখ ত্রয়, আমি যুক্তি দিয়ে তোমাকে সব বুঝিয়েছি। আমার কোন ভাই নেই বোনও নেই। বাবা অনেকগূলো শারীরিক সমস্যা মোকাবেলা করছে। তার এতো সব দেখার জন্য নিজস্ব কেউ নেই। আমি ব্যতীত অন্য উত্তরাধিকারও নেই আমাদের। আর আমার বাবা মা শুধু তোমাকে জামাই না সন্তানদের মতোই এক্সেপ্ট করেছে। তোমারও এক বোন ছাড়া কেউ নেই। আমরা তোমার সব হতে চাই সেটা কি অন্যায়? সুতরাং আর একদিন যদি এসব নিয়ে তুমি আমাকে বলা তো দূরের নিজেও কথা ভাবতেও পারবেনা।”

“আচ্ছা আচ্ছা । তোমাদের শপিং শেষ?”

“হ্যাঁ, আমি জানি তোমার ঘড়ি খুব পছন্দ। আর এ জন্য আমি দুটো ঘড়ি কিনেছি। তোমাকে পড়লে খুব সুন্দর লাগবে, তোমার পছন্দও হবে।

” রাতু, তোমাকে আমার সব থেকে বেশি পছন্দ। তাহলে তোমার কেনা জিনিসটা পছন্দ হবেনা কেন?”

আজ রাতু আর ত্রয় এর বিয়ে। অনেক অনেক মানুষ কমিউনিটি সেন্টারে এসেছে অতিথি হয়ে। জাঁকজমক আয়োজন। কোথাও কোনো ঘাটতি রাখেননি রাতুর বাবা । একমাত্র মেয়ে। ভালোবাসার অস্তিত্ব। সে একটুও অভিযোগ বা কষ্ট পাক তিনি কখনোই সেটা চান না ।

“কিরে রাতু, বিয়ের সাজে তো তোকে পরীর মতোই লাগছে।”

রাতুর মামাতো বোন রুমকি রাতুর পাশে গিয়ে বসলো। ” খুব ভালোবাসিস ত্রয় কে তাই না? ”

রাতু লাজুক হেসে বড় বোনের দিকে তাকালো ” সেটা জানি না আপা, তবে ওর সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকে ওকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না, থাকতেও পারি না। আর এটা যতোই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে।”

“খুবই ভালোরে। তোরা সুখী হ এটাই আমরা চাই ।”

” হ্যাঁ আপা দোয়া করো, ও এতিম। ছোট থেকে খুব কষ্ট আর সংগ্রাম করে এতো দূর এসেছে। খুবই ট্যালেন্ট আর সরল মানসিকতার। সব থেকে বড় কথা, ও প্রচণ্ড রকম ভালোবাসে আমাকে, আর খেয়ালও রাখে।”

“হুম, তোদের সুখ দেখলে খালা খালুও শান্তি পাবে। ওরা তোর বিন্দুমাত্র কষ্ট সহ্য করতে পারে না ”

অস্থির হয়ে পায়চারি করছেন রাতুর বাবা। বারান্দার এপাশ থেকে ওপাশ যাচ্ছেন আর আসছেন। তার পিছনে পিছনে ম্যানেজারও আপ ডাউন করছে।

” ওদের আসার কথা এগারোটায়। এখন বারোটা বেজে গেছে। ত্রয়ের ফোনটাও বন্ধ। আফজাল, হচ্ছে টা কি…?”

” আমিও বুঝতে পারছি না স্যার। আমি কি ওর বোনের বাড়িতে যাব? খোঁজ নেব কি হয়েছে? এমন তো করার কথা না। ফোন বন্ধ কেন?”

“না আর একটু দেখি, তারপর নাহয় দেখা যাবে। সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে। কি একটা অবস্থা!”

বারোটা পঁচিশ এর দিকে রক্তাক্ত একজন কমিউনিটি সেন্টারে মেন ফটক দিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঢুকলো। দারোয়ান ঠেকাবার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই শুনছে না ছেলেটা। হট্টগোল দেখে এগিয়ে এলেন রাতুর বাবা সহ অনেকেই। ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো রাতুও। রাতুকে দোতলার ব্যালকনিতে দেখে ছেলেটা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে উঠলো।

” রাতু আপা সব শেষ। ঐ মাতাল ট্রাক ড্রাইভার সব শেষ করে দিলো,সব…..”

ত্রয়ের বন্ধু ফজলের কথা শুনে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো রাতুও।

” কি হয়েছে ফজল ভাই? তোমার শরীরে এতো রক্ত কেন? ত্রয় কোথায়? আমার ত্রয় কোথায়?

” গাড়িতে আমরা চারজন এখানেই আসছিলাম। ঐ মাতাল ট্রাক ড্রাইভার এতো জোরে এসে আমাদের গাড়ির উপর পড়ল যে, সব শেষ আর ত্রয় ওখানেই….”

দোতলা থেকে নিচে রাতু যেন উড়ে এল। ফজলের জামা ধরে ঝাঁকাতে লাগলো।

” আমার ত্রয়, আমার ত্রয় কোথায় ফজল ভাই ”

ত্রয়ের বন্ধু ফজল হাঁটুমুড়ে ওখানেই বসে পড়ল।

“আমরা তিনজন জখম হলেও ত্রয়কে শেষ করে দিয়ে গেছে ঐ ঘাতক। ত্রয় ওখানেই মারা গেছে”

রাতু গাছ থেকে ঝড়ে পড়া শুকনো পাতার মতো যেন ঝড়ে পড়ল মাটিতে। জ্ঞান হারলো।

সেই দিনের পর থেকে বহুদিন পর এখনও রাতু নীরব। চার মাসেও ওর কোন উন্নতি হয়নি। একা একা থাকে আর একটু পরপর “ত্রয়” বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে………।।

Powered by themekiller.com