Breaking News
Home / Breaking News / বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি এড়াতে করনীয়ঃ

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি এড়াতে করনীয়ঃ

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি এড়াতে করনীয়ঃ
(কবি ও সাহিত্যিকঃ রৌনকা আফরুজ সরকার)

বিশেষজ্ঞরা, গুণীজনরা পূর্বাভাস দিয়ে অনেক আগেই জানিয়েছেন বাংলাদেশ কতটা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে এবং ভূমিকম্প হলে কি পরিমান ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘের মতে বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ বিশটি শহরের মধ্যে ঢাকা শহর অন্যতম। ভূমিকম্পের ঈঙ্গিত পাওয়ার পরও যদি ক্ষতি এড়ানোর কার্যকর চেষ্টা না করা হয় (আল্লাহ না করুক) কোন দূর্ঘটনা ঘটলে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক তার জন্য হবে সেটা শ্রেষ্ঠ মানবাধিকার লঙ্ঘন।তুরস্ক ও সিরিয়ার ২০২৩ সালের ভূমিকম্পের ভয়াবহ রূপ দেখার ও জানার পরও সামাজিক আন্দোলন গড়ে ওঠছেনা। বাংলাদেশ ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে জেনেও বাংলাদেশের কোন কর্তৃপক্ষই ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানোর কার্যকর চেষ্টা করছেনা।
ভূমিকম্পের ক্ষতি এড়ানো বা কমানোর জন্য তিন স্তরে বিভিন্ন কার্যকর ব্যবস্হা নেওয়া যায়ঃ

(ক) প্রথম স্তরঃ
এটি ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি নিরসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর।এ পর্যায়ে কিছু সিদ্ধান্ত ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বে নিতে হবে এবং দুর্যোগের হাত থেকে জনগণকে রক্ষায় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বেই কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রথম স্তরে অর্থাৎ ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বে যে কাজগুলো করতে হবেঃ

(১) ঝুঁকিপূর্ণ স্হান সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে।
(২) ঝুঁকিপূর্ণ স্হান সম্বন্ধে রাস্ট্রের জনগণকে ধারনা দিতে হবে।
(৩) ঝুঁকিপূর্ণ স্হান থেকে জান- মাল নিরাপদ স্হানে পুর্বেই সরাতে হবে।
(৪) ঢাকসহ সকল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালত সরিয়ে নিতে হবে।
(৫) সবধরনের ক্যামিক্যাল ও কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ স্হান থেকে বের করে দিয়ে অনাবাসিক এলাকায় স্হাপন করতে হবে।
(৬) হাসপাতাল গুলো নিরাপদ স্হানে স্হানান্তর করতে হবে।
(৭) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ স্হানে স্হানান্তর করতে হবে।
(৮) ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।
(৯)শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ স্হানে স্হানান্তর করতে হবে।
(১০) সামর্থ্যবান লোকজনদের নিজ দায়িত্বে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছাড়ার পরামর্শ দিতে হবে।
(১১) ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বেই ফাটলযুক্ত স্হান থেকে সাধ্যমতো জান-মাল সরিয়ে নেওয়ার সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
(১২) নতুন স্হাপনা বিল্ডিং কোড মেনে করতে হবে।
(১৩) ভূমিকম্প সহনীয় বাড়িঘর তৈরি করতে হবে।
(১৪) সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
(১৫) ফোরশক ও আফটার শক সম্পর্কে জানতে হবে।
(১৬) আলোচনা ও টকশো করে সময়ক্ষেপন না করা এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্হা নিতে হবে।
(১৪) ভুমিকম্পের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গুরুত্ব দিতে হবে।
(১৬) সবসময় ফোন সহ জরুরি জিনিস কাছে রাখার পরামর্শ দিতে হবে।
(১৭) সরকারি সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছানোর সুব্যবস্হা করতে হবে।
(১৮)ভূমিকম্প সম্পর্কিত তথ্য মিডিয়ায় বেশি বেশি প্রচার করতে হবে।
(১৯)ভূমিকম্প হওয়ার আগেই রাস্তার দুই পাশে প্রচুর জায়গা খালি রাখতে হবে তা না হলে দুর্যোগকালীন সময় যোগাযোগ ব্যবস্হা ভেঙে পড়বে এবং উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হবে।
(২০) বিল্ডিং কোড না মেনে এত বিল্ডিং ঢাকা শহরে ওঠলো কিভাবে? রাজউক কতটা দায়িত্ব অবহেলা করেছে এবং কেন করেছে ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্হা গ্রহণ করতে হবে।
(২১) দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্হা রিমোট অঞ্চলেও ছড়িয়ে দিতে হবে।
(২২) জনগণের কাছে দুর্যোগের যাবতীয় খবর পৌঁছানোর ব্যবস্হা রাখতে হবে।
(২৩) দুর্যোগ মোকাবিলায় তিন বাহিনী সহ দক্ষ জনবল প্রস্তুত রাখতে হবে।
(২৪) সামাজিক আন্দোলন জোড়দার করতে হবে।
(২৫) খাদ্য, ঔষধ, নিরাপদ পানি ও উদ্ধার কাজের সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখতে হবে।
(২৬) সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে ও সময় মতো বাস্তবায়ন করতে হবে।
(২৭) প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান দিতে হবে।
(২৮) দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয়গুলো জানতে সকল শ্রেণীর মানুষের জ্ঞান একত্রীকরণ করতে হবে।
(২৯) গবেষণা আরো উন্নত করতে হবে।
(৩০) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার ও রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতা রাজউককে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করতে পারেনি। সরকারকে আরো সুদক্ষ হতে হবে ও বিল্ডিং কোড বিষয়ে কঠোর হতে হবে।

(খ) দ্বিতীয় স্তরঃ

এটি হলো ভূমিকম্প চলাকালীন স্তর। এটি জীবনযুদ্ধে হার জিতের স্তর। এ স্তরে ভূমিকম্পে দুর্যোগের স্বীকার
ব্যাক্তিরা নিজেকে নিজে রক্ষা করার জন্য কতিপয় কৌশল অবলম্বন করবে।

(১)ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে মনে সাহস রাখতে হবে।
(২) ফোরশক এবং আফটার শক থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
(৩) সম্ভব হলে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করতে হবে।
(৪) আগুন জ্বালানো যাবেনা।
(৫) বিল্ডিং এর ভীমের পাশে দাঁড়াতে হবে।
(৬) গাড়িতে থাকলে ভেতরেই বসে থাকতে হবে।
(৭) মোবাইল ফোনে অথবা চেচামেচি করে নিজের অবস্থান অন্যকে জানাতে হবে।
(৮) মাথায় কভার বা প্রটেকশন দিয়ে খাট অথবা টেবিলের নিচে বসে পড়তে হবে।
(৯)মাটির দেওয়াল থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
(১০)ধূলিবালি থেকে নাক, মুখ ও চোখ সাবধানে রাখতে হবে।
(১১) ভূমিকম্প চলাকালীন লিফট ব্যবহার করা যাবেনা।

(গ)তৃতীয় স্তরঃ
তৃতীয় স্তর ভূমিকম্পে আংশিক অথবা পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্হদের পাশে দাঁড়ানোর স্তর। তৃতীয় স্তরে করণীয়ঃ
(১) উদ্ধার কর্মী ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের যথাসময়ে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণের জন্য সরকারকে নির্দেশ ও নির্দেশনা দিতে হবে।
(২) স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।
(৩) বেসরকারি সহায়তার সুযোগ দিতে হবে।
(৪) রাজনৈতিক হিংসা ভুলে ক্ষমতাসীনদেরকে
দুর্যোগ মোকাবিলায় বিরোধীদলগুলোকে সাথে নিতে হবে। বিরোধীদলগুলোর ভালো পদক্ষেপের প্রশংসা করতে হবে।
(৫)ত্রাণের সুব্যবস্হা করতে হবে।
(৬) পুনর্বাসনের ব্যবস্হা করতে হবে।
(৭) হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্হা করতে হবে।
(৮) দ্রুত ধ্বংস স্তুপের বর্জ্য সরাতে হবে।
(৯) জাতীয় ও আন্তজার্তিক সাহায্য নিশ্চিত করতে হবে।
(১০) বিদেশী সহায়তা পাওয়ার জন্য সরকারকে বিভন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
(১১)উদ্ধার কাজে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।
(১২)উদ্ধারকৃতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্হা করতে হবে।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের যে পূর্ব প্রস্ততি রয়েছে
তা হলো চাঁদের দেশের গল্প শুনিয়ে মানুষকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করা।
অবশ্য ঢাকা শহরের বিল্ডিং এর সাথে রাস্তার ও অলিগলির যে সম্পর্ক তাতে ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাস্তাঘাট বিল্ডিং এর ইট বালুতে ভরে যাবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্হা বিকল হয়ে পড়বে। সরকারকে খুব একটা তৎপর হতে হবেনা। যোগাযোগ বিকল হলে উদ্ধার তৎপরতা ও বিকল হবে। যারা বেঁচে যাবে তারা হয়তো দেখবে লাশের সাগর।চরমভাবে লঙ্ঘিত হবে মানবাধিকার। ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বেই ঝুঁকি পূর্ণ এলাকা থেকে জান -মাল নিরাপদ স্হানে সরিয়ে নেওয়াই বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে হবে সর্বোত্তম ব্যবস্হা।

Powered by themekiller.com