আগুন
সুদেষ্ণা সিনহা
বুয়ামাসির পোলাটা আজ মারা গেল।
বাঙাল পাড়ায় শোকের ছায়া।
কেউ বলল—বদ সঙ্গ,বদ লেশা পোলাডার সব্বোনাশ করত্যাছিল।
কেউ বলল—-মাধান ওমন,পোলার আর কি হইব !
কেউ বলল—-পাগলী বুয়াটার কি খেতি যে হল!
কেউ বলল—-একট্টুধান পোলা ,যাবার কি বয়স আছিল!
বুয়ামাসিকে ছোট থেকে এমনটাই দেখছি,
অবসন্ন চোখের তারায় অস্থিরতা,ভয় আর অবিশ্বাস…
বাঙাল পাড়ায় সবাই বলে,
বাংলাদেশে রায়টের সময়
বুয়ামাসির চোখের সামনে
বাড়ির লোকেদের পুড়িয়ে মেরেছিল ওরা।
গোলা ভরা ধান,খেত ভরা ফসল,সেগুন কাঠের আসবাবপত্র,ঘর ভরা জিনিস,ঠাকুরদার রূপোর গড়গড়ি,সোনার গোপাল,কাঠের সিংহাসন….
সব কালো অঙ্গার….
বুয়ামাসির স্মৃতিটাও কালো আঁধার….
বুয়ামাসিকে কারা এ দেশে এনেছিল কেউ জানে না।
উদ্বাস্তু কলোনির তাঁবুতে তাঁবুতে
ঘুরতে ঘুরতে বাচ্চাটা পেটে এসেছিল।
মাসি তখন বদ্ধ উন্মাদ…..
বাচ্চা হল,উদ্বাস্তু কলোনীতে ঘর হল……
বাচ্চা বড় হল….
বুয়ামাসি ফ্যালফ্যাল করে তাকায়….
বুয়ামাসির জটাধরা চুল,নোংরা গা,মাথা ভর্তি উকুন
ছেঁড়া জামা-কাপড়,ভাঙা বোতল,প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট…
বলরামপুর রেলস্টশনের কৃষ্ণচূড়াগাছটার নীচে
ঝোলাঝুলির সংসার
বুয়ামাসির স্মৃতিটাও কালো আঁধার।
সবাই বলল,পোলাডা তোর চলে গেল রে…
ও বুয়া কাঁদ্ কাঁদ্,কোন্ দিন আর মা ডাওন শুনবা না….
ছোট থেকে যেমন দেখেছি,
বুয়ামাসি আজও তেমন…
অবসন্ন চোখের তারায় অস্থিরতা,ভয় আর অবিশ্বাস…
এবার ছেলের চিতা জ্বলবে,
কে বা কারা মাসিকে শ্মশানে নিয়ে গেছে…
কাঠের শয্যায় বুয়ামাসির ছেলে…
আগুনের লেলিহান শিখা
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতেই
গর্জে উঠল বুয়ামাসি—
ওডা নিভাই ফেল।পোলাডারে নামায় দে।কি শুনব না কতা!
চিতা থেকে জ্বলন্ত কাঠ তুলে
আক্রমণ করার জন্য ছুট দিল মাসি।
বাঙাল পাড়ায় সবাই বলল—
সব্বোনাশ ! রায়টের সেই আগুনের কতা এখ্খনে মনে আয়তেছে মাইয়্যাটার।