শিরোনাম- আমি পাঞ্চালী বলছি
কলমে- রিতা ব্যানার্জি
আমি সেই কন্যা,
যজ্ঞকুণ্ড স্বম্ভূতা যাজ্ঞশেণী, তপ্ত কাঞ্চনবর্না,সারা অঙ্গে অগ্নির দীপ্ত কান্তি।
আর মনে অগ্নির দহন জ্বালা, সমগ্র জীবনে প্রতিটি পলে,প্রতিটি ক্ষণে যা আমায় নির্মম ভাবে দগ্ধ করেছে।
আমি সেই আত্মজা,
পাঞ্চাল রাজ দ্রুপদ কন্যা দ্রৌপদী।
পুত্র কামনায় পিতার পুত্রেষ্টী যজ্ঞকুণ্ড থেকে ষোড়শী রুপে আমার সৃষ্টি ।
আমি সেই নন্দিনী,
স্বয়ংবর যার অসাধ্যসাধন,
বীর পরাক্রমী পুরুষের অণ্বেষন।
আমি সেই দুহিতা,
বীর পরাক্রমী সুপুরুষ লাভ করেও যাকে হতে হয়েছে পঞ্চ স্বীকার ।
আমি সেই কামিনী,
কর্ণ যার চির শ্রদ্ধার সম্ভার,
শ্রদ্ধা থেকে ভালোবাসার জন্ম হলেও সব ভালো বাসাতে শরীরি গন্ধ থাকে না ।
জানি আপত্তি উঠবে,আধুনিক সমাজ পিটুইটারির ব্যাখ্যা চাইবে ।
আমি বলি মননশীলতা, কেউ দেখে চাঁদের আলো- কেউ দেখে কলঙ্ক ।
কেউ দেখে নারী পুরুষ কেউ আবার শুধুই মানুষ ।
আমি সেই স্ত্রী,
যে পঞ্চ পাণ্ডবের সুখ,সমৃদ্ধি ও অহংকার,
সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় পাণ্ডবদের শৌর্য বীর্জ প্রদর্শনের হেতু ।
জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব যুধিষ্ঠির,যিনি আমার সকল সত্য পালনের আধার,
মহাবলী ভীম যিনি আমার সমস্ত অপমান,লাঞ্ছনা ও যন্ত্রনার প্রতিশোধের মাধ্যম,
আমি সেই সহধর্মিনী,
রাজকন্যা হয়েও সাদরে গ্রহণ করেছি বনবাসী জীবন, মনিহার, কাঞ্চনমালা সমস্ত আভরন,প্রসাধন ত্যাগ করে গ্রহণ করেছি সন্ন্যাসিনীর বেশ।অজ্ঞাতবাসে অবলীলায় স্বীকার করছি কৃতদাসীর জীবন ।
আমি সেই মাতা
নিজ গর্ভে জন্ম না দিলেও ,অভিমূন্য প্রাণাধিক প্রিয়পুত্র,তার মৃত্যু, নিজ পাঁচ পুত্রের মৃত্যু যা আমার হৃদয়ে সহস্র সেল হেনেছে ।চূর্ণ বিচূর্ণ করেছে মাতৃহৃদয়ের সকল গ্রন্থিকে।
আমি সেই সখী ,
পূণ্যাত্মার আত্মা নাকি পরমাত্মার সাথে মিলিত হয় জন্মান্তরে,
জানিনা কোন পূণ্য বলে ,ইহ-জন্মেই আমার সকল বিপত্তারন, একমাত্র সহায় সখা দ্বারকাধিপতি।
আমি সেই মেয়ে,
আধুনিক সমাজ আজ যার নাম দিয়েছে ‘ব্যভিচারিনী’,
যারা আমার অন্তর মথিত কষ্টের সাগর দর্শণ করেনি,
যারা আমার প্রেম ও সমর্পনকে শ্রদ্ধা করেনি,
যারা আমার ত্যাগ ও তিতিক্ষাকে অনুভব করেনি,
সত্যে অবিচল নিষ্ঠা রেখে স্থির হয়ে যাওয়া মনকে সম্মান করেনি,
একটা হৃদয় পাঁচ টুকরো হওয়ার যন্ত্রণা বোঝার চেষ্টা করেনি, তাদের ঈশ্বর করুণা করুন ।
আমি সেই নারী,
আজকের মতো নিজের যাবতীয় চাহিদা পূরণের জন্য স্বেচ্ছায় বহুগামী নই।
আমি পরিস্থিতির স্বীকার, ধর্ম ও গুরুজনের বাক্য কে মান্যতা দিতে এক ঐতিহাসিক চিরন্তন মর্মস্পর্শী নিষ্ঠুর বলীদান।
অশ্রু সজল চিত্তে তাই করোজোড়ে বলে যাই, আমি স্বেচ্ছাচারিনী নই,
ক্ষমার অনলে শুদ্ধ ,আমি চিরসূচী পাঞ্চালী।