আমি দুঃখগুলো রাখতে গিয়েছিলাম
-মো.হুমায়ুন কবির
আমি দুঃখগুলো রাখতে গিয়েছিলাম
অতিকায় পাহাড়ের কাছে
পাহাড় বললো:
সীমাহীন দুঃখ নিয়ে আমি
দাঁড়িয়ে আছি লক্ষ বছর!
আমি সাগর পাড়ে গেলাম
দুঃখগুলো বিসর্জন
দিয়ে আসতে
সমদ্র বললো:
কোটি বছরের ফেলে যাওয়া
মানব দুঃখ নিয়ে আমি
করে যাচ্ছি আস্ফালন
আমাকে আর
দুঃখ দিতে এসোনা
ছুটে গেলাম অরণ্যের কাছে-
তোমাদের পত্র
পল্লবের মর্মরে
আমার দুঃখগুলো গেঁথে নাও
বৃক্ষরাজি শনশন করে জানিয়ে দিলো:
আমরা শত হাজার
বছর ধরে
দুঃখের তানপুরা
বাজিয়ে যাচ্ছি
এখানে আর দুঃখ
রাখতে এসো না
গেলাম লাল পদ্মফোটা দীঘির কাছে
স্বচ্ছ জল টলোমল
পদ্মদিঘি বললো:
আমার যতো কষ্ট দিয়ে
আমি ফুটাই লালপদ্ম
তোমার দুঃখ এখানে
ফেলে গেলে
আর কোনোদিন
ফুটবেনা লালপদ্ম
গেলাম বিশাল বিলের মাঝে
বড্ড একাকী দাঁড়িয়ে থাকা
দুঃখী তালগাছের কাছে
বললো: তোমার দুঃখ
রেখে গেলে
আমি যে হবো ধ্বংস!
গেলাম শিউলি তলায়
ঝরে পরা ছড়ানো
শিউলি শেফালি
সমস্বরে বলে উঠলো:
শত হাজার বছর ধরে
আমরা দুঃখ হয়ে ঝরে পরি
কেউ আমাদের নেয়না খবর
শিউলি গাছ বললো:
রাশি রাশি দুঃখ ঝরাই
প্রতি প্রভাতে
আমার কাছে আর
দুঃখ রাখতে এসো না
গেলাম প্রান্তরের নিঃসঙ্গ ঘাসের গালিচায়
গাঢ় সবুজ ঘাসেরা বললো:
কতো পথিক
আমাদের মাড়িয়ে
পিষ্ট করে যায়
আমাদের কাছে আর
দুঃখ রাখতে এসোনা!
ঘাসের ডগায় জমে থাকা
থোকা থোকা শিশির বললো:
পারোতো আমাদের
নিয়ে যাও
আমরা বাতাসের কান্না হয়ে
জমে থাকি ডগায় ডগায়
আমাদের কাছে আর
দুঃখ রাখতে এসোনা!
মৌচাকের কাছে
গিয়ে বললাম:
আমার দুঃখগুলো
তিলতিল করে জমা করো
গুণগুণ গুঞ্জরণে
লক্ষ মৌমাছি বললো:
আমরা মধু তুলে আনি
দুঃখ নয়
অত:পর আমি
নীলিমার দিকে
তাকিয়ে বললাম:
কেউ নেবেনা!
আমার দুঃখগুলো তুমি নাও
অমনি ঝরঝর কান্না ঝরিয়ে
নীলিমা বললো:
আমারই দুঃখ সীমাহীন
কোটি বছর কান্না ঝরিয়েও
আমার দুঃখের শেষ নেই
আমার দিকে আর
দুঃখ ছুড়ে দিওনা!
অবশেষে আমি
দুঃখের জমাট বাধা
হিমালয় শৃঙ্গ হয়ে
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলাম
অবিচল স্থির!