Breaking News
Home / Breaking News / বেনাপোলে বানিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে বেদানা ফলের চাষ

বেনাপোলে বানিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে বেদানা ফলের চাষ

এম ওসমান, বেনাপোল ::
বেদানা, আনার বা ডালিম এর বৈজ্ঞানিক নাম: চঁহরপধ মৎধহধঃঁস এটি এক রকমের ফল। এর ইংরেজি নাম পমেগ্রেনেট (ঢ়ড়সবমৎধহধঃব)। হিন্দুস্তানী, ফার্সি ও পশতু ভাষায় একে আনার বলা হয়। কুর্দি ভাষায় হিনার এবং আজারবাইজানি ভাষায় একে নার বলা হয়। সংস্কৃত এবং নেপালি ভাষায় বলা হয় দারিম। বেদানা গাছ গুল্ম জাতীয়, ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাকা ফল দেখতে লাল রঙের হয়। ফলের খোসার ভিতরে স্ফটিকের মত লাল রঙের দানা দানা থাকে। সেগুলি খাওয়া হয়।
দানায় ভরপুর অথচ নাম বেদানা। এক সময়ের আমদানি নির্ভর ফলটির চাষ এখন দেশেও হচ্ছে। এমনই এক বেদানা চাষির নাম শামসু শেখ। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোল পৌর এলাকার রাজবাড়ি গ্রামে। শামসু শেখ মূলত একজন নার্সারি ব্যবসায়ী। শত রকমের গাছের চারা বিকিকিনি করা তার কাজ।


এই পেশার সূত্র ধরে তার মাথায় চাপে বেদানার চাষ করার। যে চিন্তা সেই কাজ। চার বিঘা জমি লিজ নিয়ে রাজবাড়ির রাজভিটায় শুরু করেন বেদানার চাষ। আজ থেকে চার বছর আগের কথা এটি। এর আদি নিবাস ইরান এবং ইরাক। ককেশাস অঞ্চলে এর চাষ প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। সেখান থেকে তা ভারত উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে এটি তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরাক, লেবানন, মিশর, চীন, বার্মা, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুস্ক অঞ্চল, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ ইউরোপ এবং আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। স্পেনীয়রা ১৭৬৯ সালে ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যালিফোর্নিয়াতে বেদানা নিয়ে যায়। ফলে বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ও এরিজোনায় এর চাষ হচ্ছে। উত্তর গোলার্ধে এটি সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মৌসুমে জন্মে। দক্ষিণ গোলার্ধে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এটি জন্মে। বাংলাদেশেও এই ফলটির চাষ শুরু হয়েছে। অনেকে বেদানার চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন।
কৃষিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়াতে বেদানার চাষ সম্ভব। বীজ ও কলম দুটি থেকেই জন্ম নেয় বেদানা গাছ। বীজ থেকে বেদানার চারা সহজে উৎপাদন করা যায়। তবে বীজের চারার গাছে ফলের মাতৃত্বগুণ বজায় থাকে না। এজন্য শাখা কলম দিয়ে বেদানার চাষ করা লাভজনক। কলমের গাছে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। ফুল আসার পর পুষ্ট হওয়া পর্যন্ত সময় লাগে ছয় মাস। লাভজনক মাত্রায় ফল পেতে আট-দশ বছর সময় লাগে। একাদিক্রমে একটি গাছ ৩০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। সারা বছরই কিছু না কিছু ফল হয়। বসন্তকালে যে ফুল হয় তাতে ফল হয় গ্রীষ্মকালে। আর বর্ষার শুরুতে যে ফুল হয় তাতে ফল হয় হেমন্তকালে। গ্রীষ্মকালের ফল অপেক্ষা হেমন্তকালের ফল মানে ভালো হয়। প্রথম ফল ধরার সময় গাছপ্রতি ২০-২৫টির বেশি ফল পাওয়া যায় না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলন বাড়তে থাকে। দশ বছর বয়সের একটি গাছে গড়ে ১শ’-১শ’৫০টি ফল ধরে। তবে ভালো পরিচর্যা নিলে গাছপ্রতি ২শ’-২শ’৫০টি ফল পাওয়া যেতে পারে।
নার্সারির কেয়ার টেকার রমিজ উদ্দিন জানান, শামসু শেখ ভারত থেকে কলম সংগ্রহ করে বেদানার চাষ শুরু করেন। চার বছর আগে লাগানো গাছে ফুল-ফল আসা শুরু করেছে। কিছু কিছু ফল বিক্রিও করা হচ্ছে। তবে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে লাভজনক হয়নি। এ অবস্থায় পৌঁছাতে এখনো কিছুদিন সময় লাগবে।
বেদানা গাছে পূর্ণমাত্রায় ফল আসার আগ পর্যন্ত বাগানের ফাঁকা জায়গায় অন্য ফসল যেমন শাক-সবজি বা বিভিন্ন ফলের চাষ করা যেতে পারে। রমিজ উদ্দিন বলেন, গাছের ফাঁকে ফাঁকে মরিচ রোপণ করা হচ্ছে। এছাড়া ক্ষেতের চারপাশে আমড়া গাছ লাগানো আছে। এই আমড়ায় বছরে ৬০ হাজার টাকা লিজ খরচ ও বেদানা বাগানের পরিচর্যা খরচ আরো ৪০ হাজার টাকা উঠে আসবে। বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে কলম তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি কলম ১শ’ টাকা থেকে ৩শ’ টাকায় বিক্রি হয়। এ থেকেও খরচের একটা বড় অংশ উঠে আসছে।
যশোর ভেষজ উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু হানিফ জানান, বেদানা আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসার পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় বেদানা বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজী মতে, বেদানা হচ্ছে হৃদযন্ত্রের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এ ফল কোষ্ঠ রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। গাছের শেকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদরাময় রোগের ওষুধ তৈরি হয়। এই ফল ত্রিদোষ বিকারের উপকারী, শুক্রবর্ধক, দাহ-জ্বর পিপাসানাশক, মেধা ও বলকারক, অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। বেদানা বিশেষভাবে হৃদপিন্ড ভালো রাখতে, ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে, স্কীন ক্যান্সার প্রতিরোধে, রক্তস্বল্পতা দূর করতে, হাড় ভালো রাখতে, দাঁতের যতেœ, ডায়রিয়া প্রতিরোধে, সর্দি-কাশি থেকে বাঁচতে, কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে সরাসরি ভূমিকা রাখে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, এই উপজেলায়

Powered by themekiller.com