Breaking News
Home / Breaking News / আমার হারানো ‘স্কুল’ ফিরিয়ে দাও!

আমার হারানো ‘স্কুল’ ফিরিয়ে দাও!

মোঃ রুহুল আমিন : পঞ্চগ্রাম আজিজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৩৯ সালে স্থানীয় দানবীরদের সহযোগিতায় স্থাপিত । ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এই বিদ্যালয়টি ‘নাওড়া বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়’ – নামে পরিচিত ছিল । ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তিত হয়ে “পঞ্চগ্রাম আজিজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়” নামে নাম করণ করা হয় । প্রায় শতবর্ষী পুরাতন এই বিদ্যালয়টিতে বাংলাদেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুয়েরা অধ্যয়ন করে পরবর্তীতে এদেশের নীতিনির্ধারক হয়েছেন । তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জের বর্তমান সাংসদ মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম অন্যতম ।

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী থেকে নব্বয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ঠিক থাকলেও তৎপরবর্তী সময় হতে ক্রমান্নয়ে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নীচে দিকে নামতে শুরু করে । একুশ শতকের প্রথম প্রায় দেড় যুগ সময় পর্যন্ত শিক্ষার মান নামতে নামতে একেবারে তলানীতে গিয়ে ঠেকে । কাগজে কলমে বিদ্যালয়ের পাশের হারের হেরফের না হলেও শিক্ষার মানে ছিল বড় ত্রুটি । এসময়ে এই প্রতিষ্ঠান হতে শিক্ষা শেষে খুব স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষাসহ চাকুরির বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে । এটা ছিল এঅঞ্চলের মানুষের বড় কষ্টের জায়গা । অভিভাবকগন একেবারে নিরুপায় হয়ে এসময়ে তাদের সন্তানদের এবিদ্যালয়ে পাঠাতেন ।

অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এসমস্যার মূলে ছিল শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ, একের প্রতি অপরের অবিশ্বাস ও ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা । আর এই অবস্থায় মদর্দ যোগাতেন এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল ।

ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাশে না আসলেও তেমন কোন খোঁজ-খবর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিতেন না । কিন্তু এলাকার সচেতন অভিভবাক যারা শিক্ষা নিয়ে ভাবতেন তারা চেষ্টা করেও কোন কাজের কাজ করতে পারেননি । যার ফলে এ বিদ্যালয়ে যাদের সন্তরা নিরুপায় হয়ে লেখা-পড়া করেছে তাদের সর্বনাস ঠিক যতটা হবার হয়েছে ।

বেশ কিছুকাল সুশিক্ষা ছাড়াই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাশ গুনতে গুনতে এক সময় বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে যখন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন ঠিক ঐসময়ই ধরা দিত বড় ভুল গোড়াতে হয়ে গেছে । ফলে যা হবার তাই হয়েছে । আদরের সন্তান লেখাপড়া থেকে ছিটকিয়ে পড়ে আধা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অভিভাবকের বোঝা হয়ে এক সময় বিদেশে বা কেরানীর চাকুরি নিতে বাধ্য হয়েছে । এই সময়কালের ছাত্র-ছাত্রীদের কোন কোন অভিভাবকদের সাথে কথা বলে তাদের হতাশার কথা জানা যায়, কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিষয়টি এখনও টের পেয়েছে বলে মনে হয়না ।

বিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থীরাই বিজ্ঞানের ছাত্র কিন্তু সেই সেরা ছাত্র-ছাত্রীরা তেমন কোন ভাল ফলাফল করতে বা দেখাতে পারেনি । এই বিদ্যালয় হতে বিজ্ঞান বিভাগ হতে অধ্যয়ন শেষে খুব স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পেয়েছে । যারা পেয়েছে তা অভিভাবকদের চেষ্টায় ফল । এই সংখ্যাও একেবারেই হাতে গোনা ।

তবে, আশার কথা ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময় হতে এ অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করেছে । বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল অনিয়ম দূর করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ।

“বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল ফয়েজ টিটু স্বপ্ন দেখেন ও আশা করেন, আগামিতে কুমিল্লা বোর্ডের মেধা তালিকায় এক থেকে দশে ‘পঞ্চগ্রাম আজিজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়’র – নাম লেখাতে” ।

তিনি জানান সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন । এবিষয়ে তিনি এলাকার সূধীজন, রাজনৈতিক নেতা, সামাজিক সংগঠন, প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনসহ সকল অংশীজনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন ।

পঞ্চগ্রাম আজিজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ফিরে পেতে প্রায়ই আকুতি করতে শুনা যায়, একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে্ আমরাও বিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ফিরে পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকলাম ।

Powered by themekiller.com